জুলাই দুই হাজার চব্বিশ।
রক্তের অক্ষরে লেখা হলো জাতির নতুন ইতিহাস।
দেশব্যাপী শুরু হলো বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
দাবী উঠলো-”কোটা প্রথা নিপাত যাক মেধাবীরা মুক্তি পাক।”
ঢাকা চট্টগ্রাম রাজশাহী রংপুর খুলনা বরিশাল,
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল জুড়ে দানা বাধলো তীব্র গণ-আন্দোলন।
ঘোষণা এলো-“কোটা দিয়ে কামলা নয়, মেধা দিয়ে আমলা চায় ।”
আন্দোলন দমাতে মরিয়া হয়ে উঠলো সরকার ।
রংপুরের তরুণ আবু সাঈদ এক বীর যোদ্ধা,
নির্ভীকতার অভিধানে সাহসের সুউচ্চ মিনার।
হাতে তার গাছের ভাঙ্গা ডাল,
উত্তর-দক্ষিণ দুহাত প্রসারিত করে
ঘাতকের উত্তপ্ত বুলেটের সামনে পাতলো বুক; যেন এক অজেয় পর্বত।
অবুঝ শিশুর দু’চোখ ঠিকরে বেরোয় ঘৃণার বিষবাষ্প,
তার অপরিণত হাত পুলিশের ঘুষ খাওয়া উদ্ধত পেটে অবিরাম চালায় ঘুষি
ঘৃণার আগুনে পোড়াতে চায়-স্বৈরাচারের পোষা কুত্তার আইনি পোষাক।
বোরখা পরিহিত মেয়েটার কন্ঠে ধ্বনিত হলো-
“পিছনে পুলিশ সামনে স্বাধীনতা ।”
ভয় নাই ভয় নাই অমানিশার রজনী শেষ,
রাত পেরুলেই নতুন সূর্যোদয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের টগবগে তরুনের বলিষ্ট ঘোষনা-
“বুকের ভিতর দারুন ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর।”
গুলি কর-গুলি কর, গুলি কর বলতে বলতে-
বন্দুকের নলের সামনে এগিয়ে যাওয়া দৃঢ়চেতা যুবকের অসীম বীরত্বের কাছে আত্মসমার্পন করলো হিমালয়ের দৃঢ়তা।
ঢাকার আকাশে হেলিকপ্টারের গগণ বিদারী অট্টহাসি,
বৃষ্টি ধারার মতো মিছিলের মাথায় ঝরালো বুলেটের ঝাঁক।
বিজিবির ছাই রাঙ্গা ট্যাং হতে টেনে হিঁচড়ে-ছিটকে ফেলা হলো ইয়ামিনের নিথর দেহ।
রাস্তায় নামলো ট্যাং,জলকামান, ভারী অস্ত্র,
নামলো পুলিশ-আনছার,বিজিবি, ক্যান্টলমেন্টের সৈন্য।
একদিকে প্রশিক্ষিত পেশাদার সুসজ্জিত সৈনিককের কামানের নল,
অন্যদিকে ছাত্র-জনতার তরুন টগবগে বুকের সাহসী পাটাতন।
মারা হলো জলকামান- টিয়ারশেল, করা হলো লাঠি চার্জ ।
তবুও টলেনা তারুন্যের পর্বত।
মাথার উপরে কাঠফাটা খাঁ খাঁ রোদ্দুর ,
পিচ গলে ছড়ায় আগ্নেয়গিরির জলন্ত লাভা,
ঢাকার রাজপথে কারবালার পিপাসা।
ফেরেশতার মত নিষ্পাপ এক সুদর্শন যুবক মুগ্ধ,
ফেরদৌসের কাওসার হাতে বলল-
কারো পানি লাগবে পানি?
বলতে বলতে ঘাতকে তপ্ত বুলেট এসে
ফেলে দিলো হাতের পেয়ালা,
নিভে গেলো জীবন প্রদীপ-
মিটে গেলো অসীম পিপসা,
পান করে মৃত্যুর অমর সুধা ।
পুলিশের প্রিজন ভ্যানে লাশের স্তুপ,
রিকশার পাদানিতে ঝুলে আছে নাফিজের রক্ত মাখা জীবন্ত লাশ।
যুদ্ধের হাতিয়ার হয়ে উঠলো প্লাকার্ড, পোস্টার-ফেস্টুন ।
দেয়ালে দেয়ালে আঁকা হলো প্রতিবাদের গ্রাফিতি-
রচিত হলো আগ্নেয়গিরিরির চেয়ে শক্তিশালী স্লোগান।
গর্জে উঠলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
শিক্ষক গোলাম রব্বানীর সুতীব্র চিৎকার
স্মৃতি সৌধের সুউচ্চ মিনার থেকে জানালো প্রতিবাদ,
ইথারে ইথারে নবারুন কন্ঠে হলো বজ্রনাদ-
“এ মৃত্যু উপত্যাকা আমার দেশ নয়।
স্বৈরাচারী ডাকলো, এসো করি আলাপ,
তারুণ্য জানালো-“বন্দুকের নলের সাথে ঝাঁঝরা বুকের হয়না সংলাপ।”
৫ ই অগাস্ট, আমাদের ছত্রিশে জুলাই।
দফা এক দাবি এক স্বৈরাচারের পদত্যাগ।
বিপ্লবীদের মিছিল চলেছে যাত্রাবাড়ী, পল্টনে-গুলিস্তানে,
চাঁনখারপুল, ঢাকা মেডিকেল,শহীদ মিনার,পলাশীর প্রান্তরে;
দোয়েল চত্বর,টিএসসি হয়ে শাহবাগে।
বাংলামোটর, ফার্মগেট,মহাখালী, মিরপুর
ধানমন্ডি, নীলক্ষেত, উত্তরা, মোহাম্মদপুর-
একটাই প্রশ্ন-গণভবন কতদুর!
লক্ষ পায়ের প্রকম্পিত পদধ্বনি এগিয়ে চলেছে গণভবন,
আকাশ-বাতাস মুখরিত করে অট্টালিকায় তুলেছে ভূ-কম্পন;
ভাতের থালা ছেড়ে স্বৈরাচারী পালালো ফেলে সিংহাসন।
দেশের আকাশ সীমা ছেড়ে-ছেড়ে বাংলার মাটি,
স্বৈরাচারী নামলো গাজীয়াবাদের হিন্দন বিমান ঘাঁটি।
রেখে গেলো এক কলংকিত স্মৃতি-
তার শখের আসবাব, খাট-পালংক,চেয়ার-টেবিল
কাঁথা-বালিশ,ক্ষেতের সবজি,গোয়ালের গরু,লেকের মাছ,খোপের খোরগোশ সবি হলো দখল,
রাজার ধণ আজ প্রজার সম্পত্তি।
বিপ্লবীরা খুলে নিলো প্রাসাদের প্রতিটি ইট,
ছিনিয়ে নিলো ক্ষমতার মসনদ।
খুলে নিল স্বৈরাচারের অন্তর্বাস।
পড়ে থাকলো লাল ইটের মাঝে স্বৈরাচারের পোড়া কংকাল।
গণভবনের চূড়ায় উড্ডীন হলো মোত্তাকিনের বিজয় পতাকা।
“পরাধীনতার শিকল ছিঁড়ে খাঁচা ভেঙ্গে অনন্ত উদার উন্মক্ত আকাশে
ডানা মেলে উড়লো-“শান্তির শ্বেত পায়রা”।
বন্ধু-“সারা জীবন শুধু ইতিহাস পড়েছি;
আজ-ইতিহাস লিখে গেলাম আমরা।”