কাঁচা দুধের একটা মিষ্টি ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ল সকালের বাতাসে। কাঁচা মাটির উঠোনের বেশ খানিকটা জায়গা জুড়ে গড়ায়ে পড়েছে সদ্য দহনকৃত এক মালসা কাঁচা দুধ। দুধের মাছিরা এখনো খবর পায়নি। কিন্তু দুধের মিষ্টি গন্ধের সাথে কানে ভেসে এলো কিছু তেতো কথার সুর। গ্রাম্য ভাষার সরল উচ্চারণে শোনা গেল- “তোর গায় বল নেই তো বাছুর ধরতি যাস কেন্, আর আমার এ সাড়ে-সব্বনাশ করলি ক্যান্? হয় আমার দুধের দাম দিবি নাই বাপের বাড়ি চলি যাবি। ভাবি-চিন্তে দ্যাখ কোনডি করবি।” কথাগুলো বেশ রাগান্বিত হয়ে আক্ষেপের সাথে বললেন আহমাদ চাচা। কিন্তু চাচার এই হুশিয়ারিতে খুব একটা জোর ছিলনা। তার এই ধমক শুনে ভয় পেয়ে কেউ যে তার ঘর ছেড়ে চলে যাবে সে আশা করা যায় না। আদতে আহমদ চাচা খুব ভালো রাগ করতেও পারেন না।
গ্রামের একজন খুব সহজ সরল সাধারণ মানুষ আহমদ চাচা। নিজের সঠিক বয়স বলতে পারেন না চাচা। তবে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের ডজন খানে পেলেন নাকি তার মাথার উপর দিয়ে কয়েকবার আসা যাওয়া করতে দেখেছে। সেই হিসেবে বলা যায় তার বয়স সত্তর পেরিয়ে আশি ছুঁই ছুঁই। খুব সাদামাটা গোছের একজন মানুষ। হাঁটেন কচ্ছপ গতিতে। খুব দীর্ঘদেহী নয়। আবার খর্বকায়ও নয়। মাঝামাঝি স্বাস্থ্য। গায়ের রং জোবের মাটির মতো কালো নয়। তবে বেশ ময়লাটে। মাথা ভর্তি ছোট ছোট চুল। পেকে দুধের মত সাদা রং ধারণ করেছে। বুক দুবলা ঘাসের মতো এলোমেলো পশমে ভরা। চুলের মতো বুকের পশম দুধ সাদা। কুনো ব্যাঙের চামড়ার মত নাক। ভ্রুর লোমগুলো চোখের পাপড়ির মতোই লম্বা আর সাদা কালো মেশানো। কানের উপরেও গজিয়েছে দু’এক গুচ্ছ ঘাস। পরনে একখানা মোটা খদ্দরের কাপড়। সর্বদা উপরে গুটিয়ে হাঁটু বরাবর উচ্চতায় পরিধান করেন। লুঙ্গির উপরের বাড়তি কাপড় গুলো দুধের মালসার মত বোঁচকা পেটের নিচে ডিব্বার মত ঝুলে থাকে। সারা জীবন তার আদুল গায়ে কেটেছে। জীবনে কেউ কোনদিন তাকে জামা পরতে দেখেনি। আহমাদ চাচার কোন জামা নেই তা নয়। বিয়ের কালে নাকি পলেস্তার কাপড়ের হাফ হাতা গরুর ব্যাপারীর মত দুই পকেট ওয়ালা একখানা ফতুয়া পেয়েছিল। কিন্তু জীবনে কখনো গায়ে পরেনি।
শুধুমাত্র কাশিডাঙ্গার হাটে যাবার কালে ঘাড়ে করে বেতের ধামায় বেসাতি আনার সময় কাঁধের উপর দো’ভাঁজ করে ফেলে রাখে।
আজ মঙ্গলবার। খলিশখালী বটতলার দুধবাজার। আহমদ চাচা খুব সকাল সকাল বাজারের দুধ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। উঠানোর সম্মুখে সফেদা গাছকে কেন্দ্র করে দুখানা লম্বা বাঁশ ইংরেজি “ভি” এর মত করে বাঁধা হয়েছে। জীর্ণশীর্ণ রুগ্ন একটা লাল গাভীটাকে এনে এই বাঁশের খোঁয়াড়ের মধ্যে গলায় গলায় বাঁধলেন আহমাদ চাচা। গতকাল সন্ধ্যায় ছয় মাসের কচি বাছুরটাকে বেঁধে রাখা হয়েছিল। চাচার দুধ দোহন কাজে সহযোগী হিসেবে আজ আছেন রমেছা বেগম। ইশারা করতেই চাচী বাছুরের দড়ি খুলে দিল। ক্ষুধার্ত আর তৃষ্ণার্ত বাছুর ঝাঁপিয়ে পড়ল মায়ের স্তনে। চাচা হাত দিয়ে মাঝে মাঝে বাছুরের মুখ সরিয়ে দিচ্ছেন যাতে করে সবটুকু দুধ খেয়ে না ফেলে। গলায় দড়ি বাঁধা কাঁচের বোতল হতে মাঝে মাঝে সরিষার তেল মালিশ করে নিচ্ছেন গাভীর স্তনে। বাছুরের মুখের লালায় ফেনা ফেনা আর তেলতেলে ভাব চলে এসেছে। বাছুরের জিব্বা আর চাচার হাতের স্পর্শে বেশ তাড়াতাড়ি ওলান ফুলে ফেঁপে টনটন করে উঠলো। বাটগুলো শক্ত আর ভারি হয়ে আছে দুধে। আহমাদ চাচা বাসছুর বাঁধার আদেশ জারি করলেন। আদেশ পেয়ে রমেছা চাচী প্রাণপণ চেষ্টায় বাছুরটিকে মায়ের স্তন হতে বিচ্ছিন্ন করে গোয়ালের খুঁটির সাথে এক প্যেঁচ দিয়ে শক্ত করে দড়ি ধরে রাখলেন।
চাচা এবার গাভীর পেট বরাবর বসলেন। পাছার নিচে কোন পিড়ি নিলেন না খাটো লুঙ্গিটাকে আরও আটো সাটো করে কোচড়ের মধ্যে গুটিয়ে নিলেন। তাতে করে ছতর সীমান্ত অতিক্রম করে উরুর অর্ধাংশ উন্মুক্ত হয়ে পড়ল। উরুদেশের খসখসে চামড়ার উপর কাঁচা পাকা পশম গুলো নজর এড়ালোনা রমেছা বেগমের। দুই হাঁটু এক জায়গা করে দু’পায়ের পাতা দু’খানা দেড় হাত ফাঁক করে ইংরেজি “ভি” এর মত করে বসেছে আহমদ চাচা। ঠিক যেন সফেদা গাছে বাঁধা বাঁশের খোয়াড় আর চাচার ভঙ্গিমা দুটোই একই রকম। গাই দোহনের সময় সাধারণত সে এভাবেই বসে। দুধ দোহনের জন্য মাঝারি একখানা দোনা চাচা তার দুই হাঁটুর সংযোগস্থলে স্থাপন করলো। টসটসে বাটে টান পড়তে চিনচিন শব্দ দুধ বের হলো। কয়েক মিনিট টানার পর দোনাটা ভরে উঠলো কানায় কানায়। ধীরে ধীরে দুধের ধারাটাও চিকন হয়ে এলো। আরেকবার বাছুরটাকে ছেড়ে স্তনে ফের দুধের সংস্থান করে দ্বিতীয় দফায় দহন করলে আরো এক পোয়া দুধ পাওয়া যাবে অনায়াসে।
কিন্তু বাছুরটির আর তর সইছে না। দুধের দোনা দেখে সে উতলা হয়ে পড়ল। সজরে এক টান মেরে চাচীর হাত ফসকে ঝাঁপিয়ে পড়ল আহমাদ চাচার গায়ের উপর দিয়ে মায়ের স্তনে। উঠে দাঁড়ানোর ফুৎরতটুক পেল না সে। দুধের দুনা সমেত চিৎ হয়ে পড়ে গেল পিছনে। দুধের দোনাটা ছিটকে পড়লো হাঁটু থেকে। চাচার লুঙ্গিখানি এবার উরু সীমান্ত অতিক্রম করে কোমরে উঠে গেল। টাটকা দুধে ভিজে গেল নিষিদ্ধ এলাকা। রমেছা বেগম দৌড়ে এসে তুলে দিতে গেলে দ্বিগুণ রেগে গেল সে। এই ঘটনায় রমেছা চাচি ছাড়া দ্বিতীয় কেউ প্রত্যক্ষদর্শী ছিল না বলে আট আনা মান সম্মান রক্ষা পেয়ে সান্তনা পেল চাচা। তথাপি রাগে ক্ষোভে অপমানে লজ্জায় ক্ষিপ্ত হয়ে রমেছা বেগমকে গৃহত্যাগের কঠোর নোটিশ জারি করেলেন আহমদ চাচা।
সকাল বেলায় যে মিষ্টি দুধের গন্ধ আর তেতো কথার চিৎকার চেঁচামেচি শোনা গিয়েছিল তার উৎপত্তিস্থল ছিল আহমদ চাচার উঠান।
আজ আর বাজারে দুধ যাবেনা। ঘরে বেসাতি আসবেনা। চুলায় আগুনও জ্বলবেনা। কিন্তু পেট মহাশয় তো আর জীবনের এই সব টানা পড়েন আর দৈন্যতা বুঝবেনা। সংসারের প্রায় তিন গন্ডা উপস পাকস্থলীর কথা চিন্তা করে সে একটা উপায় বের করল। গাছের পাতা পাড়া লম্বা বাঁশের তৈরি লগা খানা নিয়ে উঠানের সফেদা গাছ হতে কিছু কাঁচা পাকা সাফেদা পাড়লো চাচা। এখন আর তার গাছে উঠার বয়স নাই। গাছে না উঠে ফল পাড়ার এটা একটা কৌশল। সফেদা গুলো সারা উঠানের ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে দেখে এগিয়ে এলো রমেছা বেগম। কয়েকটি ফল কুড়িয়ে সবে মাত্র রেখেছে ধামায়। নিচু হয়ে আরো দু’একটি ফল তুলছে। চোখ পড়তেই হাতের লগা দিয়ে সজোরে রমেছা বেগমের পিঠে আঘাত করল সে। আজ তার কোন সাহায্য নিতে চায় না আহমাদ চাচা। চাচি একবার কুকিয়ে উঠলেন কিন্তু কাঁদলেন না। প্রতিবাদও করলেন না। নাকে মুখে কাপড় টেনে দাঁতে চেপে ধরে সরে গেলেন গোয়াল ঘরের দিকে।
আহমার চাচা নিজেই কুড়িয়ে নিলেন ফল গুলো। ধামা ভর্তি সফেদা কাঁধে চাপিয়ে রওনা দিলেন কাশিয়াডাঙ্গার হাটে। পথের ধারে একটি খুপরি ঘরের গোলপাতার চালের নিচে বসল সে। সারাদিন বেঁচা বিক্রি পাঁচ আনা দশা না আর চার আনা আট আনা মিলিয়ে মোট আড়াই টাকা পেল আহমাদ চাচা। তাতেইবা কম কিসে। আজ বেশ পয়সা জমেছে গাঁটে। বোঁচকা পেটের নিচে পোটলা বাঁধা লুঙ্গির এক প্যেঁচ খুলে শক্ত করে বেঁধে রাখলেন পয়সাগুলো। দুধ না বেঁচেও হাতে বেশ টাকা জমেছে আজ। তাই এক পোয়া কম দামি তেলাপিয়া মাছ দুটি বেগুন আঁধা সের মুলা আর এক আটি ডাটা ধামায় চাপিয়ে বাড়ি ফিরলেন আহমদ চাচা।
বাড়ি হতে হাটের দূরত্ব খুব বেশি না হলেও পায়ে হাঁটা পথ। আশি ছুঁই ছুঁই বয়স। গিরায় গিরায় বাতের ব্যথা। আগের মত পায়ে জোর নেই। গায়ে শক্তি নেই। চলায় গতি নেই। চোখে ভালো জ্যোতি নেই। হাতে একখানা তেলতেলে বাঁশের লাঠি। বুক বরাবর উঁচু। লাঠির মাথায় কিছুটা ন্যাকড়া জড়িয়ে নেওয়া হয়েছে ধরার সুবিধা করতে। পায়ে একজোড়া টায়ারের তৈরি স্থায়ী জুতো। আহমদ চাচা আর অহেদ চাচা দু’জনে মিলে গুড়পুকুরের মেলা থেকে চল্লিশ বছর আগে দু’জোড়া জুতো কিনেছিল। সেই মোতাবেক লোকে বলে এই জুতোর বয়স নাকি আহমাদ চাচার বয়সের অর্ধেক। জীবনে কেউ কখনো তাকে এই জুতা বদল করতেও দেখেনি। কখনো পা ধুয়ে ঘরে ওঠেনি আহমাদ চাচা। বলা হয় যৌবন বয়সের পথের ধুলা নাকি এখনো লেগে আছে তার পায়ের চামড়ায়। গলায় ঝুলানো কালো তাগিতে ছোট করে বাঁধা একখানা মাদুলি থুতনির নিচে ঝুলে থাকে। চোখের উপর জমে আছে দীর্ঘদিনের ছানি। পরিষ্কার দেখতেও পায় না। অনুমান করে পথ চলেন। চক্ষু শিবির থেকে বিনামূল্যে পেয়েছিল একখানা মোটা ফ্রেমের চশমা। আতসী কাঁচের মতো পুরো যার কাঁচ। তাও আজ হতে তিরিশ বছর আগের কথা। চশমার কাঁচে পাওয়ারের আধিক্য এতটাই যে অল্প বয়সেই কেউ চোখে দিলে হোঁচট খেয়ে পড়ে যাবে মাটিতে। ছোটরা তো সুযোগ পেলে মাঝে মাঝে তার চশমা চোখে দিয়ে কানা কানা খেলতো।
কয়েক বছর পর। আশ্বিনের এক সকাল। গত আষাঢ়ের বর্ষায় এবারে হাটের রাস্তায় বেশ কাঁদা জমেছিল। পাটকেলঘাটা বাজার হতে জুজখোলা গ্রামের তেতুল তলার মোড় হয়ে কাশিয়াডাঙ্গা বাজারের উপর দিয়ে একখানি কাঁচা মাটির সড়ক খলিশখালি বটতলায় গিয়ে মিশেছে। গ্রামের গরুর গাড়ি আর ঘোড়া চলে রাস্তার কাঁদা উলট পালট হয়েছে। ভাদ্র আশ্বিন এর কড়া রোদে কাদা শুকিয়ে রাস্তাঘাট এখন এবড়ো থেবড়ো অবস্থা। এমনই কাঁচা মাটির উঁচু-নিচু পথ ধরে শরতের এক শিশির ভেজা শুভ্র সকালে পথে বের হয়েছে আহমাদ চাচা। হাতে তার এক ঘটি দুধ কানায় কানায় পরিপূর্ণ। টিনের ঘটির গলায় স্থায়ীভাবে বাঁধা হয়েছে একখানা পাটের পাকানো দড়ি। দুধে ভিজে দড়ি খানা বেশ ময়লা আর স্যাতসেতে ভাব। বেশ সতর্কতার সাথে পথ চলছে আহমাদ চাচা। গন্তব্য খলিশ খলির দুধ বাজার। হাতের লাঠির সাহায্যে ঠুকিয়ে ঠুকিয়ে পথের উঁচু-নিচু মালুম করে পথ চলছে। গরুর গাড়ির চাকা দেবে যাওয়া বড় গড়তে পা পড়তেই উপুড় হয়ে দুধের ঘটি সমেত পড়ে গেল সে। অর্ধেকের বেশি দুধ পড়ে গেল মাটির শুকনো গর্তে। মুহূর্তে শুকনো মাটি চুষে নিল মিষ্টি দুধের স্বাদ।
হতাশাগ্রস্থ মনে লাঠিতে ভর করে উঠে দাঁড়ালেন চাচা। চশমাটাও পড়ে গেল নাক থেকে। চারদিকে লাঠি ঠুকিয়ে ঠুকিয়ে চশমার অস্তিত্ব আবিষ্কারের চেষ্টা করছেন তিনি। লাঠি ঘুরাতে ঘুরাতে আওয়াজ পেল চশমার। কোন রকমে হাতড়ে তুলে নিয়ে গুঁজে দিলেন নাকে কানে। তারপর ভগ্ন মনে ফের পথ চলা শুরু করলেন। বয়স যত বাড়ছে প্রকৃতি যেন ততই রসিকতায় মেতে উঠেছে আহমদ চাচার সাথে।
আহমাদ চাচার বাড়ির অনতিদূরে মোজাহার মাস্টারের নগরা খাল বয়ে গেছে। এই নগরা খালের উপর আয়ুব সরকার একখানা পাকা পুল স্থাপন করে গরুর গাড়ি পারাপারের ব্যবস্থা করেছিলেন। এই পুল নির্মাণ কালে দুই আনা মজুরিতে কাজ করেছেন আহমদ চাচা।
পূর্ব দিকের পদ্মবিল হতে একখানা জলস্রোত ভারসা বিলের উপর দিয়ে এই নগরা খাল অতিক্রম করে শ্যাওলা কুঁড়ের বিল হয়ে পশ্চিমের চাঁন্দর খালে যেয়ে মিশেছে। আষাঢ়ের মাঝামাঝি হতে শরতের শেষ পর্যন্ত এই খালের পুলের উপর চলে মাছ ধরার উৎসব। আহমদ চাচার খেপলা জালখানা এখান থেকে কত যে মাছ তুলেছে তার হিসাব কারো জানা নেই। অতীতের সেই মাছ ধরা সোনালী দিনের কথা স্মরণ করে চাচা আজ গিয়ে দাড়ালো পুলের উপর। পুলের একপাশে পড়ছে খেপলা জাল পশ্চিম পাশে বড়শিধারী বালকের ভিড়। গুটি গুটি পায়ে লাঠি ভর করে আহমদ চাচা কোনরকম পুলের উপর উঠে রেলিং ধরে দাঁড়ালেন। পশ্চিমের বালকেরা একের পর এক বড়শিতে টান মারছে। সলিমের পোতা আল মাহমুদের বড়শিতে কয়েকটা ঠোক মারতেই ডুবে গেল পাতাশি। অমনি বড়শিতে মারল সজরে টান। কোন মাছই উঠলোনা। তবে ঘটল বিপত্তি। বিধি বাম। বড়শির সুতা জড়িয়ে গেল পিছনে দাঁড়ানো আহমদ চাচার চশমার বাটে। ছিপখানা ধরে ফের সামনে টান মারতেই আহমদ চাচার নাক হতে কান ছিঁড়ে উড়ে গেল তার চশমা। এক টানে গিয়ে পড়ল খালের ওপারে পশ্চিম পাশে ঝড়ু শেখের তালগাছের মাথায়।
এদিকে আহমাদ চাচা আমার চশমা, আমার চশমা কই, আমার চশমা কই বলে তিন চক্কর দিলেন। চাচার বুঝতে বাকি রইলনা যে তার চশমা লুকিয়ে রাখার মত দুষ্ট পোলাপানের এখানে অভাব নেই। তাই সে সবার কাছে অনুরোধ করল তার চশমা ফিরিয়ে দিতে। ছেলেবুড়ো সবাই হাসিতে গড়াগড়ি দিল। এমন একটি নাটকীয় ঘটনার কিছুই টের পেল না আহমাদ চাচা। শুধু বলল- “তোরা কিডা নিলি আমার চশমা দে আমার চশমা দে।” রসিক ওসমান তো হেসে বলল- “তোমার চশমা বোল মাছে নিয়ে গেছে চাচা।” আহমদ চাচার কান্ড দেখে জলের তলের চ্যাং পুঁটিরাও বোধহয় হেসে উঠলো। কোন মতে চশমা ছাড়া লাঠি ঠুকিয়ে বাড়ি ফিরে এলো সে। তারপর মাটির বারান্দায় খুঁটি হেলান দিয়ে বসলেন আজ আর রমেছা বেগমকেও ধারের কাছে দেখা যাচ্ছে না।
পরদিন সকালে চশমার খোঁজে উসমানের বাড়িতে গেল চাচা। ওসমান হাসতে হাসতে প্রকৃত ঘটনা খুলে বলল। কিন্তু বিশ্বাস করল না সে। ওসমান ফের কান কিরি দিয়ে বলল- “সত্যি চাচা তোমার চশমা ঝড়ু শেখের তালগাছের মাথায় আছে।” মাথার চশমা কিভাবে তাল গাছের মাথায় উঠতে পারে এই মহাজাগতিক তও্ব বুঝে আসলোনা আহমাদ চাচার।
আহমাদ চাচার সাত ছেলে আর তিন মেয়ে। ছেলে মেয়ের হিসাবও ঠিকমত রাখতে পারেনা সে। কেউ জানতে চাইলে কয়েক মিনিট আঙ্গুলে গুনে হিসাব করে তারপর বলে- নয় কিবা দশ জন হবে আর কি। সবার নামও তার জানা নেই। মাঝে মধ্যে তেঁতুলতলার মোড়ে দোকানের চরাটের উপর বসা নিজের ছেলেকেও জিজ্ঞেস করেন এই খোকা তোর বাপের নাম কিরে? ছেলেও তার কম রসিক নয়, মজা করেই উত্তর দেয়- “চাচা আমার বাপের নাম আহমাদ চাচা।”
পরদিন চাচা তার পাঁচ নম্বর ছেলে কুদ্দুসকে অনেক বলে কয়ে তুলে দিলেন ঝড়ু শেখের তাল গাছে। চাচাও পিছন পিছন গেল তাল তলায়। কুদ্দুস গাছের মাথা থেকে চশমা খুঁজে আনলো বটে। কিন্তু তার একখানা ডাটি নেই। তাল গাছের আঘাতে ভেঙ্গে গেছে চশমার ডান পাশের ডাটা। তবুও ভাঙ্গা চশমা খানি ফিরে পেয়ে আহমাদ চাচা খুশি হলেন বটে কিন্তু ভাঙ্গা বাটে হাত বুলিয়ে বিষন্নতায় ভেঙে পড়লেন। হতাশা কন্ঠে বিড় করে বললেন- “বয়স বাড়লে প্রকৃতি বুঝি সবার সাথে এমন তামাশা করে।” তারপর চাচা তাল তলায় অনেক করে চশমার বাট খোঁজা-খুঁজি করে কিছুতেই না পেয়ে নাকের উপর চশমা রেখে হাতে ধরে বাড়ি ফিরে এলেন।।
চার কিবা পাঁচ মাস পরের কথা। নগরা খালের পানি শুকিয়ে গেছে। তলার কাদা পর্যন্ত শুকিয়ে মাটি শক্ত হয়ে গেছে। এমনই এক বিকেলে ঝড়ু শেখের তালতলায় দেখা গেল আহমাদ চাচাকে। কিছু তাল শুকনো মাটির মধ্যে পড়ে আছে। লাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে পরখ করছে চাচা। আসলে সে তার হারিয়ে যাওয়া চশমার বাটখানা খুঁজে চলেছেন।
আহমাদ চাচার বেঁচে থাকার অবলম্বন কয়েকটি বস্তুর মধ্যে তার হাতের বাঁশের লাঠি আর চোখের চশমা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বস্তু। চক্ষু শিবির থেকে বিনামূল্যে পাওয়া এমন একখানি মোটা পুরু শক্ত পোক্ত মজবুত টেকসই চশমা এ যুগে আর পাওয়া যাবে না। তবু ভাতের থালার মাছের কাঁটা খুঁজতে গিয়ে চশমাখানি তার সম্বল। তাই রাত দিন এক করে ডাটা ছাড়া এই চশমা ব্যবহারের একখানে উপায় আবিষ্কার করে ফেললো আহমাদ চাচা।
আজ রাত যাক কাল সকাল হলেই তার এই নব আবিষ্কারের চমকে যাবে গ্রামের লোকজন। মাঘের শেষ কিংবা ফালগুনের গোড়ার দিকের কথা। শীতের তীব্রতা কমে গেছে। টুকটাক গাছের পাতা ঝরা শুরু হয়েছে। এমনই এক সকালে উঠেই গায়ে দহন করলো আহমদ চাচা।
তারপর দাওয়াই বসে একগুচ্ছ শুকনো পাট বাঁধলেন বারান্দার খুঁটিতে। তারপর হাঁটু গেড়ে বসলেন মাটিতে। বাঁশের চালে গোজা টাকুর খানা পেড়ে সুতুলি পাকানো শুরু করলেন। আলগা উরুর উপর ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পাটের চিকন সুতা কাটছেন আহমাদ চাচা। এরপর এক টাকুর সুতা কাঁটা হলে বন্ধ করে দিল সুতা কাটা। টাকুর হতে হাত দেড়েক সুতালি নিয়ে দোতারি করে তৈরি করলো চিকন সুতার মত একখানা দড়ি। তারপর চাচা নামলেন তার নব আবিষ্কারের কাজে।
হাতে পাকানো দড়ির এক মাথায় বাঁধলেন চশমার ফ্রেম। অন্য মাথায় বাঁধলেন চশমার ডাটি। এবার নাকের উপর চশমা রেখে বামডাটা খানা গুঁজে দিলেন বামকানের উপর দিয়ে আর দড়ি খানা নামিয়ে দিলো মাথার পিছন পর্যন্ত।। ব্যাস। আজ খুশিতে ভরে উঠল আহমাদ চাচার মন। তার চশমা পরার একটি স্থায়ী সমাধান হল। কেউ আর তার চশমা কেড়ে নিতে পারবেনা। হাঁটতে গিয়ে আর হোঁচট খেয়ে মাটিতে পড়বেনা। দুষ্ট ছেলেরা আর বড়শি বাঁধিয়ে তাল গাছেও তুলতে পারবেনা। তার চশমার এই কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীর কথা ভেবে চাচা আজ মহা খুশি।
পরের বছর ফের গাভীন হয়েছে আহমাদ চাচার লাল গাই। বাছুর হতে আরও ছয় মাস বাকি। তাই গরুর দুধ নেই। বিক্রিও নেই। হাতে পয়সা কড়িও নেই। সংসার চলছে কোন রকম শাক পাতা আর নুনের ছিটায়। চাচা এ গাছ ও গাছ করে দুই একটা কলা পেঁপে আর সফেদা পেড়ে বিক্রি করে সংসার চালান।
শীতের শেষ বিকেল। হাটে খুব বেশি মানুষের আনাগোনা নেই। একখানি চটের ছালা মাটিতে বিছিয়ে সওদা নিয়ে বসে আছে আহমাদ চাচা। গায়ে তার একখানি লাল রঙের চাদর। চাদরের তলে চাচার দুই বগলে দুই হালি সাফেদা রাখা। ফলগুলো গতকাল পাড়া এখনো ভালোমতো পাকেনি। তাই বগলের তাপে জাগ দিয়ে কিছুটা নরম করতে এই ব্যবস্থা। আহমাদ চাচার এই আবিষ্কার আজ নতুন নয়। বেশ পুরানো এই পদ্ধতিতে কাজে লাগিয়ে বোগলে রেখে সফেদা পাকিয়ে বিক্রি করে সে। চাচার এই পদ্ধতির কথা গ্রামের মানুষজন ঠিক জানেনা তা নয়। তবে আজ ভরা হাটে চাদরের তলা দিয়ে অস্তিনের তলা হতে সফেদা বের করতে দেখে ফেললে ওসমান। অমনি দৌড়ে এসে বলল- “চশমা তো বেশ মানিয়েছে আহমাদ চা। আর হারাইনির ভয় নেই, তা তুমি এত সফেদা কোন ফ্যাক্টরিতে বাইর করতে চাও শুনি।” বলেই তার গায়ের চাদর ধরে দিল টান। অমনি আহমাদ চাচার দুই বগল হতে বেরিয়ে পড়লো দুই হালি আদা কাঁচা আদা পাকা সাফেদা।
হাটের লোকজন সবাই হাসিতে ফেটে পড়লো। আমান বলল- “তুমি তাহলে এই ব্যবসা কর। তোমার তো দেখতেছি কার্বাইড লাগেনা। বলেই একটি পাকা সফেদা সাবাড় করলো। আহমাদ চাচা ছালার উপর বসেই পা লম্বা করে একখানা লাথি আমানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল- “দূর হয়ি যা তুই। বারপুনি। আগে আমার সফেদার দাম দে।” বলতেই সকলে সমস্বরে হেসে উঠল আরেকবার।
এলাকার লোকের মধ্যে কথিত আছে যে, আহমদ চাচা শুধু সফেদাই না কদবেলও পাকান বগলে রেখে। একবার তো ওসমান রমেছা চাচির কোঠা হতে মুরগির ডিম নিয়ে রাতের বেলা রেখে এসেছিল আহমদ চাচার বগলের নিচে। সকালে উঠে সফেদা মনে করে সফেদার দামে বিক্রি করেছিল সেই ডিম।
উঠানে বাঁধা লাল রুগ্ন লাল গাইটা সকাল হতে ডেকে চলেছে। শুকনো খড় বিছালি ছাড়া খাওয়ার আর কিছু নেই। পেটে বাছুর তার উপর খাবার নেই। না খেতে পেরে শুকিয়ে গেছে। পাঁজরের হাড় গুলো উঁচু নিচু টিনের চালের ঢেউ এর মত দৃশ্যমান। শিং দুটো ভেঙে গেছে অনেক আগে। চামড়ার নিচে লোমের ফাঁকে ফাঁকে উকুন আর আটুলিতে ভরা। শরীরে কয়েক খানা ঘাঁ। ঘাঁয়ের উপর উড়ছে মাছি। গরুর অবস্থা আহমদ চাচার আরো বেশি করুন।
রমেছা চাচী আজ নরম সুরে বলল- “গাইডির জন্যি দু’আটি বাঁশের পাতা ভাঙ্গি আনতি পারো কিনা দেখো দিনি।” এমনি ভাবছিলেন আহমাদ চাচা নিজেও। সাথে চাচির জোর পেয়ে বাঁশের লাঠিখানা হাতে নিয়ে ঠুকঠুক শব্দ ঠাহর করে বাঁশঝাড়ের দিকে পথ মাপলেন। মাথায় রয়েছে দড়ি বাঁধা ডাটা ভাঙ্গা পুরু কাঁচের মোটা ফ্রেমের চশমা। আজ আর গন্তব্য খুব বেশি দূর নয়। পশ্চিম পাড়ার রহমতুল্লাহ শেখের বাঁশঝাড় পর্যন্ত।
বাঁশঝাড়ের নীচের অংশে খুব বেশি পাতা নেই। আবার বাশের ঝাড়ে উঠতে পারেনা আহমাদ চাচা। বেশ মুশকিল হল। তবু যে করেই হোক কয়েক গোল্লা বাঁশের পাতা তার চাই। অনেক উঁচুতে রয়েছে পাতায় ভরা লম্বা একখানা বাঁশ। বাশেঁর অগ্রভাগ পাতার ভারে ক্রমশ ধনুকের মতো বাঁকা হয়ে চাচার মাথার কিছুটা উপর বরাবর নেমে এসেছে। কোন রকম হাতের লাঠি চালিয়ে বাঁশের আগালি খানা ধরে ফেললো আহমাদ চাচা। এবার লাঠি খানা বগলে চেপে গায়ের জোরে বাঁশের আগা টানা শুরু করল। প্রানপণ চেষ্টায় বাঁশের আগা মাটি বরাবর এনে পায়ের তলায় চেপে ধরে দাঁড়ালো। চাচার টায়ারের তৈরি বিশেষ জুতা জোড়া যেন এই কাজ তাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে। ধীরে ধীরে কয়েক গোল্লা পাতা ভেঙ্গে ফেললো আহমাদ চাচা। হাতের কাছাকাছি আর খুব বেশি পাতা নেই। এই কায়দা কৌশল প্রয়োগ করে বাঁশের পাতা ভাঙ্গার পদ্ধতি আজ নতুন নয়। বেশ পুরানো। বহুদিন ধরে চাচা এই কায়দা রপ্ত করেছেন।
এবার বাঁশ টাকে উপরে ছেড়ে দেওয়ার পালা। কিন্তু কাজটা অত সহজ নয়। বেশ ঝুঁকিপূর্ণ বটে। পাতাহীন ন্যাংটা কঞ্চি গুলো সব মুখিয়ে আছে। আস্তে আস্তে করে পায়ের নিচে চাপা রাখা বাঁশের আগা ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে চাচা। উপরের দিকে বাঁশের প্রচন্ড জোর আর টান। ছাড়া পেলেই বাঁশ যেন লাফিয়ে উঠে যাবে উপরে।। চাচা একটু অসতর্ক হতেই ফসকে গেল বাঁশ। চাচার চোখে মুখে আঘাত করে বিশ হাত উপরে উঠে গেল বাশ। পাতাহীন বাঁশ এবার আগের চেয়ে অনেক বেশি উচ্চতায় গিয়ে দাঁড়ালো। কিন্তু বিধি বাম। দূরে ছিটকে পড়ে গেলো আহমাদ চাচা। তেঁতুল তলার মোড় হতে কয়েকজন এসে তুলে দিলো আহমাদ চাচাকে। কিন্তু কারা এলো আর কি হলো চাচা কিছু দেখতে পাচ্ছে না। মাথায় হাত বুলিয়ে বুঝল তার চোখে দড়ি বাঁধা চশমা নেই। সকলে পাতার ফাঁকে চশমা খোঁজাখুঁজি করল। কিন্তু না আশেপাশে কোথাও চশমার দেখা নেই। উপরের দিকে তাকাতেই দেখা গেল তার চশমা বাঁশের ঝাড়ের একেবারে মাথায় ঝুলে আছে। বাঁশের কঞ্চিতে চশমার দড়ি জড়িয়ে মহাশূন্যে উঠে মধ্যাকর্ষণ শক্তির গতি প্রকৃতি অবলোকন করছে আহমদ চাচার চশমা।
সকলে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। গ্রামের লোকজন সব দেখতে এলো। তবে আহমদ চাচা কে নয়। বরং আহমদ চাচার এই বিখ্যাত চশমা কিভাবে বাঁশের ঝাড়ের মাথায় উঠে গেছে তা দেখতে। স্কুলে যাতায়াতের পথে ছেলেমেয়েরা এই দৃশ্য দেখে হাসির খোরাক পেত। আর তামাশায় ফেটে পড়তো। তারপর বহুদিন পর্যন্ত বাঁশঝাড়ের মাথায় ঝুলে থাকতে দেখা গিয়েছিল আহমদ প্রচার চশমা।
কয়েকজন মিলে আহমদ চাচাকে ধরে বাড়ি পৌঁছে দিল। পড়ে গিয়ে চাচা বেশ আঘাত পেয়েছে। কঞ্চির গুতায় কয়েক জায়গায় কেটেও গেছে। লাঠিখানা পড় থাকলো বাঁশ তলায়। আহমদ চাচাকে এমন লাঠিহীন চশমা হীন দেখে লাল গাভীটাও হাম্বা করে ঢেকে উঠল কয়েকবার। প্রচন্ড জ্বর এলো আহমাদ চাচার।
আজ ফালগুনের প্রথম দিন। খুব ভোরে গাভিটার ডাক শোনা গেল। রমেছা বেগম গোয়াল ঘরে এগিয়ে গেলেন। হাসিতে ভরে উঠল তার মুখ লাল গাভীটার রাতে একটা এ্যড়ে বাছুর হয়েছে। চাচি খুশিতে বাইরে উঠানে আনলেন।
উত্তরের বারান্দায় থাকেন আহমাদ চাচা। চাচি দৌড়ে গেল খুশির খবর খানা তাকে জানাতে। কুদ্দুসের বাপ ও কুদ্দুসের বাপ বলে কয়েকবার ডাক দিয়ে কোন সাড়া পেলনা। কাছে গিয়ে গায়ের লাল চাদর খানি সরিয়ে দেখলো কোন সাড়া নেই। শেষ রাতের দিকে কোন এক সময় মারা গেছে আহমাদ চাচা। রমেছা বেগম বিলাপ করলেন। খুব কাঁদলেন। আজ যেন পৃথিবীতে বড় একা হয়ে গেছেন রমেছা।
শেষ রাতে ফজরের ওয়াক্তে লাল গাভিটা যখন বাচ্চা প্রসব করে পৃথিবীতে একটি নতুন প্রাণের অস্তিত্ব ঘোষণা করল, ঠিক তখনই আহমাদ চাচার প্রাণ পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে পৃথিবীতে নতুন প্রাণের জায়গা করে দিল।
নগরা খালের সেই পাকা পুলের পূর্ব পাশের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হলো। আহমেদ চাচার কবর তৈরির জন্য আজ যে বাঁশগুলো কাটা হয়েছে তাতে সেই বাঁশটিও কাটা পড়েছে। যে বাঁশের মাথায় একদিন আহমাদ চাচার চশমা আটকে পড়েছিল।
জীবদ্দশায় কেউ তার চশমাটা আর পেড়ে দেয়নি। মৃত্যুর পর আজ যখন তার চশমার প্রয়োজন নেই তখন তার লাশের কাছে আনা হলো চশমাটি। সকলে ভিড় করে তার চশমাটা আজ নতুন করে দেখে নিল আর একবার। চাচার চশমার সাথে সাথে বাঁশ তলায় পড়ে থাকা লাঠিখানা ও কুড়িয়ে তার কবরে আনা হলো। কবরের চারপাশে বাঁশের তৈরি চটার বেড়া দেওয়া হয়েছে।
মধ্যখানে পুঁতে রাখা হয়েছে তার পথ চলার সঙ্গী বাঁশের প্রিয় লাঠি। কবরের উপর লাঠির মাথায় ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে ডাটি ভাঙ্গা দড়ি বাঁধা আহমদ চাচার সেই বিখ্যাত চশমাটি। আজও যদি কেউ তার কবর জিয়ারতে যায় তার প্রিয় লাঠির মাথায় ঝুলানো চশমা খানা দেখতে পাবে।
নোট: আহমাদ চাচা একটি জীবন্ত চরিত্র।
আহমাদ চাচা চরিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে কোন কল্পনা ও রূপকের আশ্রয় নেওয়া হয়নি।
সমাপ্ত